দক্ষিণ সুনামগঞ্জ২৪ ডেস্কঃ
বড়লেখায় পৈতৃক বাড়িতে খুন হয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আবিদা সুলতানা (৩২)। এ ঘটনায় পুলিশ বাড়ির ভাড়াটিয়া মাওলানা তানভির আহমদকে গ্রেফতার করেছে। আবিদা সুলতানা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপির (কাঁঠালতলী) মাধবগুল গ্রামের মৃত হাজী আবদুল কাইয়ুমের বড় মেয়ে। রোববার দুপুর ১২ থেকে রাত ৮টার মধ্যে কোনো এক সময় এ খুনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ প্রত্যেক আদালত এবং বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কোর্ট রেফারেন্স (আদালত বর্জন) পালিত হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে জেলা আইনজীবী সমিতি মৌলভীবাজার কোর্ট প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
জানা গেছে, মৃত আবদুল কাইয়ুমের তিন মেয়ে। স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন। বড় মেয়ে অ্যাডভোকেট আবিদা সুলতানা মৌলভীবাজার জজকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সুধাময় রায়ের অধীনে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। দ্বিতীয় মেয়ে সাজিদা সুলতানা ও ব্যবসায়ী স্বামী মারুফ আহমদ বিয়ানীবাজারে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তৃতীয় মেয়ে সাহিদা সুলতানার স্বামী আমেরিকা প্রবাসী হওয়ায় সেও মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে নিয়ে দ্বিতীয় মেয়ে সাজিদার সঙ্গে থাকেন। মৌলভীবাজারে থাকলেও আবিদা কয়েকদিন পরপর বড়লেখায় পৈতৃক বাড়ি থেকে চাল আনতে যেতেন। তিন বোনই বাবার বাড়িতে বেড়াতে গেলে মূল বাড়ির ৫০-৬০ গজ দূরে কাঁঠালতলী মেইন রাস্তার পাশের নতুন বাসায় থাকতেন। এ বাসার একপাশে তাদের পারিবারিক মসজিদের ইমাম উপজেলার চরকোনা গ্রামের মনির আলীর ছেলে মাওলানা তানভির আহমদ স্ত্রী ও মা নিয়ে ভাড়া থাকেন।
নিহত আবিদার স্বামী শরীফুল ইসলাম (একটি ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত) জানান, তারা মৌলভীবাজার শহরে থাকেন। শুক্রবার তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট আবিদা বিয়ানীবাজারে শ্যালিকা সাজিদা সুলতানার বাসায় যায়। শনিবারও সেখানে অবস্থান করে। রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিয়ানীবাজার থেকে বাবার বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর বাবার বাড়িতে পৌঁছার কথা। আনুমানিক বিকাল ৪টার দিকে আবিদার বোনেরা তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাচ্ছিল না। পরে বোন আবিদাকে খুঁজতে বাবার বাড়িতে যায়। রাস্তার পাশের বাসায় গিয়ে তালাবদ্ধ দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে তারা থানায় যায়।
নিহত আবিদার দ্বিতীয় বোনের স্বামী মারুফ আহমদ জানান, বাসা তালাবদ্ধ দেখে পুলিশ মসজিদের ইমামের শ্বশুরবাড়ি টাকি গ্রাম থেকে তার স্ত্রী ও মাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসে রাত আড়াইটার দিকে চাবি দিয়ে বাসা খোলে। এরপর একটি কক্ষে আবিদা সুলতানার লাশ পড়ে থাকতে দেখে তারা। ইমাম মাওলানা তানভির আহমদ পলাতক থাকায় পুলিশের সন্দেহ হয়।
বড়লেখা থানার ওসি মো. ইয়াছিনুল হক জানান, নিহতের মাথা ও গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার বিকালে স্বজনদের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে দুপুরে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ বরুনা মাদ্রাসা এলাকা থেকে মাওলানা তানভির আহমদকে গ্রেফতার করেছে। ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুস ছালেক বলেন, তানভীর আহমদকে গ্রেফতারের পর মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আইনজীবী আদালত বর্জন ও মানববন্ধন : খুনে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবিতে সোমবার আদালত বর্জন, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি। কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এএসএম আজাদুর রহমান আজাদ, সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।
Leave a Reply